ব্রেকিং:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
  • শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||

  • অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

  • || ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
১০৫

আদালত থেকে সরছে লোহার খাঁচা

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৪  

আদালত থেকে লোহার খাঁচা সরানোর উদ্যোগকে বিচার বিভাগের সংস্কার এবং সভ্য সমাজে পদার্পণ বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞরা। গত শুক্রবার ঢাকার চিফ  মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়েছে। আইনজ্ঞদের মতে, নিম্ন আদালতে লোহার খাঁচা ব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছিল। এমনকি জামিনে থাকা আসামিদের হাজিরার জন্যও এই খাঁচা ব্যবহার করা হতো। লোহার খাঁচা অপসারণের ফলে এ থেকে খুব শিগগিরই মুক্তি মিলবে। সরকারের এমন উদ্যোগ আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের অংশবিশেষ মনে করেন তারা। এবার ডাণ্ডাবেড়ি প্রথারও অপসারণ চান। গত বৃহস্পতিবার  সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে  সেদিন এজলাসে থাকা লোহার খাঁচায় কাউকেই ঢোকানো হয়নি। এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানোর এ উদ্যোগকে নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন লোহার খাঁচা সরানোর রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির।

 

তিনি মানবজমিনকে বলেন, আদালত থেকে লোহার খাঁচা সরানোর উদ্যোগকে বিচার বিভাগের সংস্কার হিসেবে মনে করি। নাগরিককে লোহার খাঁচায় ঢুকানো মানবাধিকারের চরম লংঘন। নিঃসন্দেহে অন্তর্বর্তী সরকারের একাজ  প্রশংসনীয়। দেশ-বিদেশেও এটি প্রশংসিত হবে।  কেননা, সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ, নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদসহ অন্যান্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দলিল এই ধরনের আচরণ অনুমোদন করে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্ধর্ষ, জঙ্গি আসামিদেরকে আদালতে না এনেও সাক্ষী নেয়ার বিধান রয়েছে। জেল কতৃপক্ষ যদি মনে করে তবে এসব আসামির সাক্ষী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিতে পারে। এজলাসে আনা আসামি যাতে অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।
এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের চেয়ারপারসন ও সুপ্রিম কোর্টের  জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না মানবজমিনকে বলেন, একটি সভ্য রাষ্ট্রের আদালতে লোহার খাঁচা থাকতে পারে না। বর্তমান সরকার আদালত থেকে এই লোহার খাঁচা সরানোর কাজ শুরু করেছে। এটি একটি পজিটিভ দিক। ভালো দিক। সরকারের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আমাদের আশান্বিত করেছে। আদালতে আসামিকে  লোহার খাঁচায় রাখাকে সংবিধানের পরিপন্থি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচারের মুখোমুখি কোনো আসামির সঙ্গে সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের চেতনার পরিপন্থি কোনো আচরণ সমর্থনযোগ্য নয়। একজন আসামিকে লোহার খাঁচায় ঢোকানো কিংবা ঢুকতে বাধ্য করা অমানবিক। লোহার খাঁচা সরানোর কার্যক্রম হাতে নেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ডাণ্ডাবেড়ি পরানো প্রথা অপসারণ করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না কিংবা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এখনো আমাদের জেলখানাগুলোতে আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। এমনকী আদালতেও আসামিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হয়। এই সরকারের কাছে এই প্রথারও অপসারণ চাই। 

 

সাবেক জেলা জজ ও রিটায়ার্ড জাজ এসোসিয়েশনের মহাসচিব ড. শাহজাহান সাজু মানবজমিনকে বলেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদের (ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস আইসিসিপিআর) ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাউকে নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি দেয়া যাবে না। আইসিসিপিআরের অনুচ্ছেদ ১৪(২) অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধের জন্য অভিযুক্ত প্রত্যেকের আইন অনুযায়ী দোষী প্রমাণের আগ পর্যন্ত নির্দোষ বলে গণ্য হওয়ার অধিকার থাকবে। এসব বিধানের তোয়াক্কা না করে এত দিন পর্যন্ত নিম্ন আদালতে লোহার খাঁচায় সব আসামিকে ঢোকানো হতো। 

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা অতীতে ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী আনিসুল হক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আদালতে কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাঁচা স্থাপন করে। এ ধরনের খাঁচা ব্যবস্থা সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কারও সঙ্গে নিষ্ঠুর-অমানবিক আচরণ করা যাবে না। অথচ, এই খাঁচা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এত দিন পর্যন্ত নাগরিকদের সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও বর্বর আচরণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার দেখলাম আদালত থেকে এই লোহার খাঁচা সরানো হচ্ছে। এই আইনজীবীর মতে, এটি গণতান্ত্রিক সরকারের আলামত। সরকারের এমন উদ্যোগকে আমরা আইনজীবীরা স্বাগত জানাই। সরকারের এমন সংস্কার নাগরিকরাও সাধুবাদ জানাবে। 

শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উচ্চপর্যায় থেকে লোহার খাঁচা সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা পাওয়ার পর শুক্রবার দুপুরের পর থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতের কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়।

সিএমএম আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, গণপূর্ত বিভাগের লোকজন লোহার খাঁচা সরানের কাজটি করেছেন। আমাদের ২৭টি কোর্টে লোহার খাঁচা রয়েছে।  এখন পর্যন্ত  ৪-৫টি এজলাসের খাঁচা অপসারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব লোহার খাঁচাই সরিয়ে ফেলা হবে। শিশির মনিরসহ হাইকোর্টের ১০ আইনজীবী আদালত থেকে লোহার খাঁচা সরানোর জন্য রিট করেছিলেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দিয়েছিলেন। সারা দেশে অধস্তন আদালত কক্ষে কতোগুলো লোহার খাঁচা রয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে হাইকোর্ট তার রুলে আদালত কক্ষে লোহার খাঁচার পরিবর্তে কাঠগড়া পুনঃস্থাপনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া আদালত কক্ষে লোহার খাঁচা বসানো কেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১, ৩২ ও ৩৫ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল। 

গত ১২ই জুন ঢাকার আদালতের লোহার খাঁচা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আজকে আমরা অনেকক্ষণ খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে ছিলাম। আমি যতদূর জানি, যত দিন আসামি অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে, তত দিন তিনি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেন। একজন নিরপরাধ নাগরিককে শুনানির সময় লোহার খাঁচায় (আসামির কাঠগড়া) দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক বলে মনে হয়েছে। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। এটা পর্যালোচনা হোক। একটা সভ্য দেশে কেন একজন নাগরিককে শুনানির সময় পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী
জাতীয় বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর