ব্রেকিং:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
  • বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ ||

  • অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

  • || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
১১৫

পথ দুর্গম, কাজ চলমান

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, আজ তার মাসপূর্তি। জুলাই-আগস্টের রক্তস্নাত আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এটা নিছক একটি সরকারের পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করাই এই পরিবর্তনের লক্ষ্য।

 

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার প্রথম ভাষণে সেই দিকনির্দেশনা তুলে ধরে বলেন, ‘একটি বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় ও মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আমি তাদের সেই স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি কী করতে চান ওই বক্তব্যে তার উল্লেখ ছিল। যেখানে তিনি বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত ও তথ্যপ্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এরই মধ্যে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, সম্পাদক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো তিনি নিয়েছেন। এর বাইরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) তাদের পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক আলী রীয়াজও রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন। 

পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করবেন। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয় ৮ আগস্ট। দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজও করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৫ সেপ্টেম্বর সরকার পতনের মাসপূর্তিতে দেওয়া এক বার্তায় সেসব সংস্কারের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সেই বার্তায় আরও বলেন, মাত্র এক মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি।

হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ শুরু

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এজন্য সরকার গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা এ দেশে এসেছেন এবং কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, তিনি জুলাই ও আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল তৈরির জন্য শীর্ষ আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। সরকার খুনিদের প্রত্যর্পণ এবং স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়। এর জন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও আলাপ শুরু করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গুম কনভেনশনে স্বাক্ষর

এই সরকারের সময়ই গুমের হাত থেকে নাগরিকদের রক্ষায় গুম ও নির্যাতনবিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতির’ সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। ড. ইউনূস বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করছি। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র ও ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সঙ্গে অপেক্ষা করছেন, আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী।

তিনি আরও জানান, আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আমরা বলপূর্বক গুমের শিকার ভাই-বোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্পর্কে জানতে পারব।

আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ফাউন্ডেশন 

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হলো বিপ্লবের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। হাসিনার দুর্বৃত্তরা তাদের চোখ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ায় অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে। 

তিনি বলেন, আহত শত শত মানুষ যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন এখন তৈরির শেষ পর্যায়ে আছে। যাদের শাহাদতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, আমরা তাদের কখনই ভুলব না।

তিনি আরও বলেন, আমরা শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। মূল তালিকা হয়ে গেছে। এখন শুধু দূর-দূরান্তে যাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলোতে পূর্ণাঙ্গতা দেওয়া হচ্ছে। 

অন্যান্য সিদ্ধান্ত 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের ভিত্তিতে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করেন। ১৯৯৬ সালে ও পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতের এই দিনকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ বাতিল করে। 

এ ছাড়া দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তার পাসপোর্টও ফেরত দেওয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। 

রাজনীতিবিদদের সংস্কার প্রস্তাব 

গত ৩১ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১১ রাজনৈতিক দল ও দুটি রাজনৈতিক জোটের মতবিনিময় হয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ‘যৌক্তিক’ সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। দলগুলোর নেতারা জানান, নির্বাচনের ‘সময়সীমা’ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচন কবে হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবও দেননি তারা। বরং দলগুলোর পক্ষ থেকে আগে সংস্কার করে পরে নির্বাচন দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। 

এর পাশাপাশি সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, একই বক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিধান রাখা, সরকার পতন আন্দোলনে হত্যার দ্রুত বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের দাবি উঠে এসেছে এ বৈঠকে।

এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আপাতত প্রধান দায়িত্ব দুটি। প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা; দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করে একটি ভয়ভীতিহীন ‍সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কোনো সংস্কার প্রস্তাব দেয়নি। যদিও দুই দলেরই শীর্ষ নেতারা তাদের নানা কর্মসূচিতে সংস্কারের কথা বলেছেন। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সীমা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বিএনপি এই সরকারের মেয়াদ যৌক্তিক সময় পর্যন্ত বললেও কোনো সময়সীমা উল্লেখ করতে নারাজ। জামায়াতও যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছে। তবে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার জন্য বেশি সময় দিতে চায়। 

নানা সংগঠনের সংস্কার ভাবনা 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও লিয়াজোঁ কমিটির একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিচারপ্রাপ্তির মতো মৌলিক বিষয়ে সংস্কারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। রাষ্ট্রের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের রূপরেখা দাঁড় করাতে ইতোমধ্যে ছয় সদস্যের একটি লিয়াজোঁ কমিটি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এই লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে রাষ্ট্রের সব অংশীজন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো, আগামীতে সংখ্যানুপাতিক (নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী আসন বণ্টন) সংসদ গঠন করা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দাবি জানাব। দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থারও পরামর্শ থাকবে। আমরা এ রকম কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছি। জনগণ যদি চায়, আগামীতে নির্বাচিত সরকার তা বাস্তবায়ন করবে।’

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গত ২৮ আগস্ট ৫৫টি সুপারিশ তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয় সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গণঅনাস্থা প্রকাশের মাধ্যমে অপসারণের ব্যবস্থা ও ওই এলাকায় নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা ইত্যাদি। টিআইবি প্রস্তাব করেছে, একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা পদে থাকতে পারবেন না; একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

একইভাবে রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সংবিধান সংশোধনসহ ১৯ প্রস্তাব দেয় নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এই প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেÑ সংবিধান সংশোধন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন ও নির্বাচনী আইনের সংস্কার, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস, রাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য ও সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন, মানবাধিকার সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ ও তাদের নেতৃত্বের বিকাশ, মানসম্মত শিক্ষা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, রাজনৈতিক দলের সংস্কারসহ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ইত্যাদি।

গত ২৯ আগস্ট সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে গণপরিষদ করে হলেও সংবিধান পুনর্লিখনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

সংস্কার নিয়ে যা বললেন রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা 

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের মূল্যায়ন ও পরবর্তী করণীয় প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল গত এক মাসে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে তা খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। আরেকটি দৃশ্যমান উদ্যোগ হচ্ছে, বিগত দিনে গণহত্যা ও গুম খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এটাকে আরও জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া অর্থনীতির চাকা সচল করতেও বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এটার সুফলও লক্ষ করা যাচ্ছে। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ বাহিনীকে আরও সক্রিয় করার পাশাপাশি পুলিশের প্যাট্রলিং বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দাগী আসামিদের জামিন পাওয়া নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় দখলদারত্বের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা বন্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে নাÑ এমন মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, এটা করা খুবই জরুরি।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী ধরনের কাজ করা হবে তার রোডম্যাপ ঘোষণার ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বলা হয়নি কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সেগুলো তারা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি। সরকারের কাজ, সংস্কার এবং নির্বাচন এই রোডম্যাপ তারা গত এক মাসেও নিয়ে আসতে পারেনি। সরকার কত দিন থাকবে তাদের মেয়াদ কত দিন হবে সেটা নিয়েও একটা সংশয় রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

সাইফুল হক বলেন, সব কাজের দায়িত্ব এই সরকারের নয়। তারা গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা করতে পারে তা হলো সকল রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও সংস্কার দরকার সে ব্যাপারে একটা জাতীয় সমঝোতা, একটা জাতীয় ঐকমত্য এবং বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে মডারেটরের ভূমিকা পালন করতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে এই সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। গত ১৬ বছরের দুঃশাসনে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে অনেকেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পড়ে। এসব ‘কেওয়াজ’ নিয়ন্ত্রণ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার বহুলাংশে এগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে। ১৬ বছরের জঞ্জাল দূর করা এত সহজ নয়। পুলিশ, প্রশাসনের শুধু উচ্চপর্যায়েই শুধু নয়, নিম্ন পর্যায়েও বিগত সরকার দলীয়করণ করেছিল। তাদের কারণে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। এ ছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢালাওভাবে মামলা করা হচ্ছে, এই সমস্যার দিকে গুরুত্ব সহকারে নজর নিতে হবে। এছাড়া একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করে সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, তারা রাজনৈতিক সংস্কার করতে চায়। দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে চায়, অর্থনৈতিক সংস্কার করতে চায়। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংস্কার সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সংবিধান পরিবর্তনের যে কথা বলা হচ্ছে সেটাও সময়সাপেক্ষ।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার করতে গেলে বহু ধরনের অংশীজনের বিবেচনায় নিতে হবে। এটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া সংবিধান পরিবর্তনের ম্যান্ডেট এই সরকারের আছে কি-না সেটাও এক প্রশ্ন। যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার আনতে চান, যেমনÑ রাজনৈতিক পদ্ধতির কথাই ধরুন, এখানে আনুপাতিক হারে যদি নির্বাচন পদ্ধতি আনতে চান, তাহলে এটা কিন্তু বড় দলগুলোর জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। এই ধরনের সংস্কার করতে গেলে তাদের মাইন্ডসেটটাও তো তৈরি করতে হবে।

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী
জাতীয় বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর