ব্রেকিং:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
  • বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৩ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
১৬

সবার মতামত নিয়ে কাজ করবে সংস্কার কমিশন

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। একই সঙ্গে এসব কমিশনের প্রধান হিসেবে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় ছয় বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্বও দিয়েছেন। 

 

দায়িত্বপ্রাপ্তরা গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের কাছ থেকে কোনো পত্র বা বিস্তারিত কিছু জানতে না পারলেও তাদের একজন এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। অন্যরাও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের আগের প্রস্তাব, সম্প্রতি বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে যেসব প্রস্তাব এসেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন। কমিশন প্রধানরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগ ইতিবাচক ও সময়োপযোগী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমসহ সব অংশীজনের মতামত নিয়েই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে তিন মাসের মধ্যে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব। 

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রধান হিসেবে ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিককে দায়িত্ব দিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে এ বিষয়ে তাদের মতামতের কথা জানান। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ থেকে আমি জেনেছি, আমাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার সঙ্গে কাজ করার জন্য কমিশনের আরও সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে। কমিশনের কর্মপরিধি কী হবে তা সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব বা আমাকে জানানো হবে। 

তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশন গঠন অপরিহার্য ছিল। বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর আমরা বলে আসছি যে, রাষ্ট্রের অনেক কিছু ঢেলে সাজাতে হবে। এই ঢেলে সাজানোর গ্রহণযোগ্যতা এবং যথার্থতা নিশ্চিত করার জন্য কমিশন গঠন অবশ্যই ইতিবাচক। এই প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ করে সংস্কার করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতো না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমার সঙ্গে যারা কাজ করবেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশনের কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমসহ সব অংশীজনের মতামত নিয়েই সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। 

দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান তার প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, দুদকের নিজস্ব চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑ এ কমিশনের যারা নিযুক্ত হন, তারা প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতির বিবেচনা থেকে নিযুক্ত হন। তারা দলীয় রাজনীতির প্রভাবে প্রভাবিত থাকেন। ফলে তাদের আনুগত্য দুদকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি থাকে না। সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেন। এ কারণে দুদক যথাযথভাবে কার্যকর না। দুদকের কর্মীবাহিনীর মধ্যে অনেকেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে চান। কিন্তু তারা কোণঠাসা হয়ে থাকেন। এই অবস্থার প্রতিকারের পথ খুঁজতে হবে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিকÑ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে মতামত গ্রহণের জন্য তিনি গতকাল বিকালে অনলাইন সভায় সুজনসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সামাজিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সভায় তিনি বলেন, গণতন্ত্র চাইলে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। এতদিন সংস্কার একটা গালি ছিল। কিন্তু এখন সবাই সংস্কারের দাবি করছে। আমরা যদি গণতন্ত্র চাই তাহলে নিজের, দলের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ পরিবর্তন করতে হবে।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে কোনো চিঠি এখনও আমি পাইনি। তবে আমরা সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য প্রস্তাব রেখেছি। গত ২৯ আগস্ট আইনি কাঠামো নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনি সংস্কারসহ অস্পষ্টতা দূর করা, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা ভাবা, নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং আসনসমূহে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হওয়ার এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছি। এ ছাড়া বলেছি, একতরফা নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়। কারণ নির্বাচন মানেই বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। এ ধরনের নির্বাচন যাতে ভবিষ্যতে না হতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা এবং ভোটার তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ কমানোর ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলেও প্রস্তাব রেখেছি। সংস্কার কমিশনে আমাদের সেসব প্রস্তাবে সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব। 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে যা বলেছেন, সংস্কার কমিশন গঠন সম্পর্কে এর বেশি কিছু আমি জানি না। আমার কমিশনের বিষয়েও কিছু বলা হয়নি আমাকে। কী কাজ, সরকার কী চায়Ñ তা আমাকে আগে বুঝতে হবে। তারপর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারব। কমিশনের কর্মপরিধি কী হবে, আমি বিষয়টি নিয়ে এখনও অন্ধকারে।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানের বিষয়ে অনেকেই বলছেন, পরিবর্তন দরকার। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুইবারের বেশি হবে না বলছেন। কিন্তু আমি যতটুকু জানি সংসদীয় গণতন্ত্রে কোথাও এটা নাই। আমেরিকা, ফ্রান্সে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় এটা আছে। সবাই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোনো প্রস্তাব আসেনি। কমিশনের কাজ শুরু হলে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলব। সবার মতামত নেওয়া হবে। 

উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতার প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। 

পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে এ নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তারও একটি ধারণা দেওয়া হবে।

পর্যবেক্ষণে রাখবে জাতীয় নাগরিক কমিটি 

সংস্কার কমিশন গঠন সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমরা দেখেছি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কয়েকটি কমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্রক্রিয়াকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একই সঙ্গে বলতে চাই, আমরা এই উদ্যোগকে মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখব। প্রধান উপদেষ্টাও ছাত্র-জনতাকে মনিটরিংয়ের বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। এটাকেও আমরা স্বাগত জানাই। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের নাগরিক কমিটির কাজের পরিধির আট দফার মধ্যেও বলেছি, আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই এবং জবাদিহিতার মধ্যেও রাখতে চাই। আবার আমরা যে জবাবদিহিতা চাচ্ছি তা তাদের কাজের জন্যও সহায়ক হবে। আমরা চাই, তারা তাদের কাজের সঙ্গে ছাত্র-জনতাকে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রাখবে। আমাদের বাদ দিয়ে তারা কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন না। কমিশন জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেই তাদের সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করছি।

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী
জাতীয় বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর