ব্রেকিং:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
  • শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||

  • পৌষ ৭ ১৪৩১

  • || ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
বন্যার্তদের জন্য রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ সংগ্রহ রাজশাহী অঞ্চলের ৫টি নদীর পানি বেড়েছে রাজশাহীতে লিটন-ডাবলুর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা রাজশাহী থেকে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন দুর্গাপুরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা, ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ বিএনপির কেউ দখল-চাঁদাবাজি করলে আইনে সোপর্দ করুন: মিনু রাজশাহীতে দিনে-দুপুরে কন্যা শিশুকে অপহরণের চেষ্টা রাবি উপাচার্যসহ ৭৫ জনের পদত্যাগ
৮১

২৩ প্রকল্পে বড় কাটছাঁট

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো হাসিনা সরকারের অপচয়ের উন্নয়ন প্রকল্প এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ। অন্তত ২৩টি রাজনৈতিক বিবেচনার প্রকল্প চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন, যেগুলোতে অকারণ খরচ বাড়িয়ে লুটপাটের সুযোগ রাখা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রকল্পে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

এর ভেতর থেকে একটি বড় অঙ্কের বরাদ্দ কাটছাঁট করা হতে পারে অথবা স্থগিত করা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই উন্নয়ন প্রকল্পে খরচের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তত ২৩টি বড় প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় অস্বাভাবিক ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর একটি প্রকল্প হলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-১। প্রকল্পটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ১৫১ কিলোমিটারের মাত্র ২৮ কিলোমিটার চার লেন করার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। তার মানে ২৮ কিলোমিটারের এই প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হওয়ার কথা প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, দেশের অবকাঠামো নির্মাণের ইতিহাসে এত ব্যয়ে আর কোনো মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়নি।

 

প্রকল্পটির পিইসি সভার সভাপতিত্ব করা পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠমো বিভাগের সাবেক সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শুধু প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়গুলো কমিয়েছি। মূল সড়ক নির্মাণের খরচে আমরা হাত দিইনি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা বলেছে আমাদের এই খরচ লাগবে। আমরা যদি সেখানে কাটছাঁট করি তাহলে রাস্তায় কোনো সমস্যা হলে আমাদের দোষ হবে।

 

এ রকম আরেকটি প্রকল্প চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ ডুয়াল গেজে রূপান্তর। এর ব্যয় চার গুণ বাড়িয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চার বছর পর একই লাইন নির্মাণে আট হাজার ৪৩২ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এডিবির ঋণ সহায়তায় ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, প্রকল্পটিতে রেললাইন স্থাপনে অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় আড়াই থেকে চার গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে।

অপ্রয়োজনীয় ও অত্যধিক ব্যয়ের প্রকল্প বাদ বিবেচনার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্তনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, অবশ্যই এগুলো যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এরই মধ্যে মনে হয় উপদেষ্টার নির্দশনায় প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গেছে। প্রয়োজন না থাকলে বা লাভ হবে না—সেগুলোর বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কর্তকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন, এমন প্রকল্প আবার যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রয়োজনে ছাঁটাই করা হবে। চলমান প্রকল্প হলেই রেখে দিতে হবে, তা নয়। অর্থের অপচয় হবে—এমন অনেক প্রকল্পও এর মধ্যে রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত সরকারের আমলে প্রয়োজন না থাকলেও রাজনীতিবিদদের চাপে অনেক প্রকল্প দিতে হয়েছে। অনেক এমপি, মন্ত্রী কর্মকর্তাদের কাছে এসে প্রকল্পটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বসে থেকেছেন। বেশির ভাগ প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ সময়ে তাঁকে খুশি করতে পাঁচ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়, যে প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন, পরিবেশবিদ ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞসহ সবারই আপত্তি ছিল। জানা যায়, প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে আসার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাড়াহুড়া করে অনুমোদন দেওয়া হয়।

নির্বাচনে আগে মতলববাসীর জন্য চার হাজার ১৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প বাগিয়ে নেন তৎকালীন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। পুরো পরিকল্পনা কমিশন সেখানে প্রকল্প নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিল। তবু নিজের ক্ষমতাবলে প্রকল্প বাগিয়ে নেন শামসুল আলম।

গত নির্বাচনের আগের একনেকে অর্থায়ন ছাড়াই আট হাজার ১৬০ কোটি টাকার তিন প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এই প্রকল্পগুলোও তেমন জরুরি ছিল না বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার মেট্রো রেলের লাইন-১ ও ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার লাইন-৫ নর্দানের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে ৫৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার এমআরটি-৫ সাউদার্ন। এসব প্রকল্পেও অপচয়ের উপাদান রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এমআরটির এসব প্রকল্প নিয়ে বিকল্প চিন্তা করছে সরকার।

এদিকে গত সরকারের আমলের একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ১৩ প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাতির খোরাকের মতো বেশি ব্যয়ের চট্টগ্রামের কালুরঘাটের রেল-রোড সেতু প্রকল্প। যে সেতু নির্মাণে ২০১৮ সালে ব্যয় ধরা হয় মাত্র এক হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, পাঁচ বছর পর এসে সেই প্রকল্পের ব্যয় ১০ গুণ বাড়িয়ে ১১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়।

বুয়েটের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, পাঁচ ফুট উচ্চতা ও রেট শিডিউলের কারণে এত ব্যয় বাড়ার কারণ নেই। দক্ষ প্রকৌশলী দিয়ে প্রকল্প যাচাই করা দরকার।

ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে তিন গুণের বেশি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এক হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পরও প্রকল্পের মাঝপথে ব্যয় বাড়িয়ে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যাকে অযৌক্তিক বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর নির্মাণের চলমান প্রকল্পটির ব্যয় ৪৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৯১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

চিলমারী এলাকায় নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩৫ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ব্যয় কমাতে পুনরায় পর্যালোচনার আওতায় থাকা নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৯৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়); পাঁচ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে রেজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট (আরইউটিডিপি) প্রজেক্ট এবং এক হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন।

এ ছাড়া অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে আছে ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গাছবাড়িয়া-শোলকাটা-কালাবিবির দীঘি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প; ৪২১ কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা-বৌদ্ধমারী বাজার জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন; ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ; ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে কর্মচারীদের আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প।

আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে কোন প্রকল্প কী অবস্থায় আছে, এর অর্থনৈতিক আউটপুট কতটা হতে পারে, সেটা পুনরায় বিবেচনা করা হবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী
জাতীয় বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর